মহুয়া
মহুয়ার পালা শুনে
দাদারা নদের চাঁদ হইতে চাইত, দাদিরা চাইত মহুয়া হইতে। রঙিন রূপবানের দিনে মহুয়ার
প্রেমে জঙ ধরছে, কারো চোখে কান্দন বারায় না। হুমরার ছুঁড়িতে ক্ষত-বিক্ষত সময়,
নিরুদ্দেশ প্রেমিক পুরুষ হয়ে যায়।
নদের চাঁদ— চাঁদ হয়া
আসমানে ঝোলে, জোছনা হয়া কান্না ঝরায় মহুয়ার বনে। আমরা মহুয়া কুড়াইতে কুড়াইতে ভুইলা
যাই এইসব গল্প। গলায় আইসা আইটকা থাকে ক্যাকটাসের মালা, তারে আর খসাইতে পারি না।
পরীবিবি
দাদা পুঁথিপাঠ শ্যাষ
হইলে তাহাজ্জতের নামাজ পইড়তেন, ঘুমাই পইড়ত্যাম আমরা। লাল নীল পাখা নিয়া উইড়া আইসত—
পরীর দিঘীর পরী, নিজেরে পরীবিবির সোয়ামী সোয়ামী লাগত। ভোর ব্যালা দাদাজান দাঁত
মাজতে মাজতে ওজু কইরতে যাইত, মুয়াজ্জিনের আজানের লগে আমরা দৌড়াইতাম দিঘীর পাড়। আমগো
লাইগা কোনো পরীই লালসালু রাইখা যাইত না— খালি খালি আফসোস বাইড়ত। সেইবার জব্বার ভাই
পরীবুরে লয়া পালাই গেলে বুঝলাম— অমনে কইরা আঙ্গোও পরী ধরতে হইব।
নৌকাবাইচ
সমবেত মানুষের ভিড়—
উল্লাসে ফাটে দুতীর। আমরা বাজাই পাতার বাঁশি, ভেঁপুর প্যাঁ-পুঁতে নেচে ওঠে জল।
স্রোতবেগে ছোটে পানি, জল কেটে এগোয় বাইচের নৌকা, সারিগানে তোলে পাল্লা। আমরা সব
হল্লা করি— গান ধরে মাঝিমাল্লা। ভাটিয়ালী সুরে নেচে ওঠে নদীকন্যা।
জিততে হবে উচ্ছ্বাস—
যুবক জোয়ান বৃদ্ধ বায় বৈঠা। স্বপ্ন যেন মুক্তোর মতো— মানবিক ইচ্ছা, নদীর মতো বেঁকে
যায় জীবনের কেচ্ছা। নৌকাগুলো ঠিক একা হয়ে ওঠে— নদী শুকিয়ে যায়। ইতিহাসের মাঠ
ধূ-ধূ, চোখ যতদূর বালুবেলা শুধু…
পুতুলখেলা
তুই আমি পুতুল পুতুল
খেলি, বিয়ে দিই। লতা-পাতা বালুভাতে করি বৌভাত। বরযাত্রা কিংবা নাইওরে ঘোড়া হই—
টগবগিয়ে ছুটি পদ্মপুকুরপাড়।
পাতার জামা, বনফুলের
গহনা, সাজাই বর-বউ। মিষ্টি বেশ— তুই আমার পুতুল বউ। পুতুল সংসার, দাম্পত্য ঘ্রাণ,
জড়িয়ে গেছি কবে— পুতুলেরা কি আজ সেই সাক্ষ্য দিবে? ভালোবাসি বলা হয়নি— অভিমান তোর,
বেলা বাড়ার সাথে লাগিয়েছিস দোর। হারিয়ে গেছে শৈশব— সেইসব দিন, পুতুলের মত করে…